যাত্রাপুস্তক

1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40


অধ্যায় 32

পর্বত থেকে মোশির নামতে দেরী হচ্ছে দেখে লোকরা উদ্বিগ্ন হয়ে হারোণকে ঘিরে ধরল| তারা বলল, “মোশি আমাদের পথ দেখিয়ে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছে কিন্তু আমরা তো এখান থেকে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না য়ে মোশির কি হয়েছে| সুতরাং এসো, আমরা আমাদের নেতৃত্ব দেবার জন্য দেবতাদের তৈরী করি|”
2 হারোণ তখন ঐ লোকদের বলল, “তোমরা আমার কাছে তোমাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কানের সোনার দুল এনে দাও|”
3 সুতরাং সবাই তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাদের কানের দুল এনে হারোণকে দিল|
4 হারোণ সবার কাছ থেকে সোনার দুলগুলো নিয়ে সেগুলো গলিযে একটি বাছুরের মূর্তি গড়ল| হারোণ বাটালি দিয়ে বাছুরের মূর্তি গড়ল এবং সোনা দিয়ে মূর্তিটির আচ্ছাদন তৈরী করল|তখন লোকরা বলল, “হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা যিনি তোমাকে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছেন|”
5 সব দেখার পর হারোণ বাছুরের মূর্তির সামনে একটি বেদী তৈরী করল| এরপর হারোণ ঘোষণা করে জানাল, “আগামীকাল প্রভুর সম্মানার্থে একটি বিশেষ চড়ুই ভাতি উত্সব পালন করা হবে|”
6 পরদিন খুব ভোরে লোকরা উঠে কিছু পশুকে মেরে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য দিল| তারপর তারা বসে পাত পেড়ে খাওয়া দাওযা করে আনন্দ স্ফূর্তিতে মেতে উঠল|
7 ঠিক সেই সমযে প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার লোকরা, যাদের তুমি মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছো, তারা মারাত্মক পাপ কাজে লিপ্ত হয়েছে|
8 আমার নির্দেশ সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে সোনা গলিযে তারা একটি বাছুরের মূর্তি তৈরী করেছে| তারা গলা সোনা দিয়ে তৈরী একটি বাছুরের মূর্তিকে পূজো করছে এবং তাকে নৈবেদ্য দিচ্ছে| আবার তারা বলছে, ‘ইস্রায়েল, এই হচ্ছে তোমার দেবতা যিনি তোমাকে মিশর থেকে বের করে এনেছেন|”
9 প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি ঐ লোকদের ভাল করে চিনি| ওরা ভীষণ জেদী ও উদ্ধত|
10 সুতরাং আমাকে একা থাকতে দাও| আমি তাদের ওপর ক্রুদ্ধ, আমি তাদের ধ্বংস করব| তারপর আমি তোমাকে দিয়ে একটা বড় জাতির সৃষ্টি করব|”
11 কিন্তু মোশি বিনযের সঙ্গে, প্রভু তার ঈশ্বরকে অনুরোধ করল, “আপনি ক্রোধ দিয়ে আপনার লোকদের ধ্বংস করবেন না| আপনি আপনার শক্তি ও পরাক্রম দিয়ে ঐ মানুষদের মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন|
12 কিন্তু আপনি যদি ওদের ধ্বংস করেন তাহলে মিশরীয়রা বলতে পারে য়ে, ‘প্রভু নিজের লোকদের জন্য খারাপ কিছু করার পরিকল্পনা করেছিলেন| তাই তিনি ঐ লোকদের মিশর থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন| তিনি চেযেছিলেন পর্বতের ওপর নিয়ে গিয়ে তাদের হত্যা করতে| তিনি চেযেছিলেন তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে| তাই আপনি তাদের ওপর রাগ করবেন না| দযা করে আপনার মনকে বদলান| আপনার জনগণকে ধ্বংস করবেন না|
13 আপনার দাসগণ অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবকে স্মরণ করুন| এবং আপনি তাদের কাছে নিজের নামে শপথ নিয়ে বলেছিলেন: ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি য়ে আকাশের অসংখ্য তারার মতো তোমাদের বংশ বৃদ্ধি হবে| এই দেশ তোমাদের বংশধরদের দিয়ে দেব| ওরা এখানে চিরকালের জন্য থাকবে|”‘
14 তাই প্রভু তাঁর মন পরিবর্তন করলেন এবং তাঁর লোকদের ধ্বংস করবার ভীতি প্রদর্শন পালন করলেন না|
15 তখন মোশি ঘুরে দাঁড়াল এবং পর্বতের নীচে নামল| তার হাতে ছিল বন্দোবস্ত লেখা দুই পাথর ফলক| ঐ দুই পাথর ফলকের দুপাশেই লেখা ছিল প্রভুর নির্দেশগুলি|
16 ঈশ্বর নিজের হাতে ঐ দুই পাথর ফলক তৈরী করে নিজেই ঐ নির্দেশগুলি লিখেছেন|
17 যিহোশূয় শিবিরের গভীরে লোকজনের কোলাহল শুনতে পেল এবং মোশিকে বলল, “মনে হচ্ছে শিবিরের লোকরা যুদ্ধ করছে|”
18 উত্তরে মোশি বলল, “এই কোলাহল কোন যুদ্ধ জয়ের উল্লাস নয় আবার পরাজয়ের কান্নাও নয়| আমি কিন্তু গান বাজনা শুনতে পাচ্ছি|”
19 মোশি সেই শিবিরের কাছে গেল| সে দেখল সোনার বাছুরের মূর্তিটি এবং লোকরা তা নিয়ে নাচানাচি করছে| এসব দেখে মোশি রেগে গেল, রাগের চোটে হাত থেকে পাথর ফলকগুলি নীচে ফেলে দিল এবং পর্বতের পাদদেশে তাদের ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল|
20 মোশি সেই সোনার বাছুরের মূর্তিকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিল| তারপর আগুনে সেই মূর্তি গলে গেলে সেই ছাই জলে মিশিয়ে ইস্রায়েলের লোকদের সেই জল পান করতে বাধ্য করল|
21 মোশি হারোণকে বলল, “এই লোকরা তোমার সঙ্গে কি করেছিল য়ে তুমি ওদের এমন পাপের দিকে ঠেলে দিলে?”
22 হারোণ উত্তর দিল, “মহাশয, রাগ করো না| তুমি তো জানো এরা সব সময়ই ভুল পথে পা বাড়ায|
23 ওরা আমায বলেছিল, ‘মোশি আমাদের মিশর দেশ থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বের করে আনলেও এখন কিন্তু তার কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না| তাই আমাদের জন্য এমন দেবতাসমূহ তৈরী করে দাও যারা আমাদের নেতৃত্ব দেবে|”
24 তখন আমি ওদের বলেছিলাম, ‘যদি তোমাদের কোন সোনার দুল থাকে তাহলে আমাকে সব দাও|’ ওরা আমাকে সোনার দুল দিলে আমি সেগুলো আগুনে ফেলে দিলে আগুন থেকে ঐ বাছুরটি বের হয়ে এলো|”
25 মোশি দেখল হারোণ লোকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিযেছে এবং তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে| লোকরা বন্য হয়ে উঠেছে| এবং তাদের সমস্ত শত্রুরা এই বোকামী দেখতে পেয়েছে|
26 তাই মোশি সেই শিবিরের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, “কেউ যদি প্রভুকে অনুসরণ করতে চাও তাহলে আমার কাছে এসো|” এবং লেবি বংশজাত লোকরা সবাই দৌড়ে মোশির কাছে চলে এল|
27 তখন মোশি তাদের বলল, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর কি বলেন তা আমি তোমাদের বলব: ‘প্রত্যেকে তার নিজের নিজের তরবারি হাতে তুলে নিয়ে শিবিরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে গিয়ে সমস্ত লোকদের হত্যা করে তাদের শাস্তি দাও| প্রত্যেকে তার বন্ধু ভাই এবং প্রতিবেশীকে হত্যা করবে|”
28 লেবি বংশজাত প্রত্যেক মানুষ মোশির নির্দেশ পালন করল| সেই দিন অন্তত 300 ইস্রায়েলবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল|
29 তখন মোশি বলল, “আজ থেকে প্রভু তোমাদের তাঁর সেবার জন্য উত্সর্গ করেছেন এবং আজ তিনি তোমাদের আশীর্বাদ করেছেন কারণ তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের পুত্রদের এবং ভাইদের বিরুদ্ধে ঝগড়া করেছ|”
30 পরদিন সকালে মোশি সবাইকে বলল, “তোমরা মারাত্মক পাপ কাজ করেছো কিন্তু এখন আমি প্রভুর কাছে যাব এবং চেষ্টা করব যাতে তিনি তোমাদের এই পাপকে ক্ষমা করে দেন|”
31 সুতরাং মোশি আবার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে বলল, প্রভু অনুগ্রহ করে শুনুন| ওরা সোনার দেবতা তৈরী করে মারাত্মক পাপ করেছে|
32 এখন আপনি ওদের এই পাপকে ক্ষমা করে দিন| যদি আপনি ওদের ক্ষমা না করেন তাহলে আপনার লেখা পুস্তকথেকে আমার নাম মুছে দিন|”
33 প্রভু মোশিকে বললেন, “য়ে আমার বিরুদ্ধে পাপ কাজ করেছে আমি কেবল তার নামই আমার পুস্তক থেকে কেটে ফেলব|
34 তাই এখন তুমি নীচে গিয়ে লোকদের য়ে দেশে নিয়ে য়েতে বলেছি সেই দেশে নিয়ে যাও| আমার দূত তোমাদের আগে পথ দেখাতে দেখাতে যাবে, পাপীর যখন বিনাশের সময় হবে তখন সে শাস্তি পাবেই|”
35 তাই প্রভু লোকদের ওপর একটি মহামারী ঘটালেন কারণ তারা হারোণকে বাছুরের মূর্তি তৈরী করতে বাধ্য করেছিল|